নিউজ ডেস্ক : চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে ভুক্তভোগীদের কিডনি হাতিয়ে নিত, এমন একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, এই পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১০ জনকে ভারতে নিয়ে তাদের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রবিবার (১২ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
ডিএমপির দেয়া তথ্যমতে, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে রবিন নামের এক ভুক্তভোগী একটি মামলা দায়ের করেন। অতঃপর গত ১১ ও ১২ মে ধানমন্ডি ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে ও বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন মো. রাজু হাওলাদার, শাহেদ উদ্দীন ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পী। উক্ত ঘটনায় পলাতক রয়েছেন মো. মাছুম, শাহীন ও সাগর ওরফে মোস্তফা সহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন।
এদিকে ভুক্তভোগী রবিনের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে মিরপুর-১০ নম্বর শাহ আলী মার্কেটের পেছনে রবিন তার এক বন্ধুর সঙ্গে চা খাচ্ছিলেন। এসময় সংসারের অভাব-অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন তিনি। ওই সময় তাদের পাশে মাছুম নামে এক ব্যক্তিও চা পান করছিলেন। এসব কথাবার্তা শুনে মাছুম নিজ থেকেই ভুক্তভোগীকে বলেন যে, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে পারবেন।
এক পর্যায়ে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান হয় এবং মাসুমের সঙ্গে প্রায় ১৫-২০ দিন মোবাইলে কথা হয় রবিনের। মাসুম রবিনকে ভারতে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি রাজি হন। ভুক্তভোগীকে পাসপোর্ট তৈরি করে দিতে সহায়তা করার কথা বলে মাসুম রবিনকে বলেন যে, ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যেতে হলে ডাক্তারি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সকালে রবিনকে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে রাজু হাওলাদারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন মাসুম। সেখানে আসামিরা রবিনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ভিসার জন্য তার পাসপোর্ট নিয়ে নেন।
ভিসা পাওয়ার পর রবিনকে মাছুম ও মো. রাজু হাওলাদার গ্রেপ্তার আসামি শাহেদ উদ্দিন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তারা একে অপরের ব্যবসায়িক অংশীদার এবং বাংলাদেশ ও ভারতে তারা যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন বলে জানান। পরে ভুক্তভোগীকে ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে রিসিভ করেন পলাতক আসামি শাহীন (৩৫) ও সাগর। তারা রবিনকে রিসিভ করে তার পাসপোর্ট হাতিয়ে নেন। পরে দিল্লি থেকে রবিনকে ফরিদাবাদ নামে একটি এলাকায় রাখা হয়।
ফরিদাবাদে ভুক্তভোগী রবিনকে আটক রাখা অবস্থায় সেখানে মাছুম ও সাগর যান। মাছুমকে পেয়ে ভুক্তভোগী তার চাকরির কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বিভিন্ন রকম টালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে আসামিরা ভুক্তভোগীর আর্থিক অনটন, সাংসারিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করেন। ভয়ভীতি দেখান যে, পাসপোর্ট ছাড়া তিনি দেশেও ফিরতে পারবেন না। পরে রবিনকে নয়াদিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কিডনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কিছুদিন পর ভারতের গুজরাটে নিয়ে যান এবং মুক্তিনগর এলাকায় দোতলা একটি বাসায় রাখেন।
দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে কাউকে কিছু না বলার শর্তে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ ভারতের গুজরাটে কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে রবিনের একটি কিডনি নিয়ে নেন। অপারেশন শেষে হাসপাতাল থেকে চারদিন পরে ছাড়া পান রবিন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আসামিরা ভারতের অজ্ঞাত স্থানে প্রায় ১০-১১ দিন আটকে রাখেন তাকে। এদিকে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে রবিন জানতে পারেন যে, তার কিডনি আসামিরা দালাল চক্রের কাছে প্রায় ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এক পর্যায়ে দালাল চক্র রবিনকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে। বাংলাদেশে অবস্থান করা চক্রের অন্য সদস্যরা রবিনের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে ৩ লাখ টাকা দেন। পরে এভাবে দেশে এসে ভুক্তভোগী রবিন বুঝতে পারেন যে তিনি বড় দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে নিজের কিডনি হারিয়েছেন।
পরবর্তীতে চক্রটির মাধ্যমে অন্যদের ক্ষতির বিষয়টি চিন্তা করে রবিন ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে।
এই প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, উক্ত চক্রটির টার্গেট হলো যাদের আর্থিক চাহিদা আছে। রবিনের ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে। তাকে কিন্তু খুব সামান্য পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চক্রটি এসব কিডনি আরও চড়া দামে বিক্রি করে আসছে। চক্রটি বাংলাদেশ থেকে শুরু করে কলকাতা ও গুজরাটেও কাজ করে আসছে।
এমএ/বিশেষ প্রতিবেদক/ঢাকা/তিতাস টাইমস২৪






0 মন্তব্যসমূহ